এ বি এন এ : যদিও এখন বৃষ্টি হচ্ছে না প্রায়শই কিন্তু তাই বলে গরম কিন্তু একেবারে কম নয় বরং এই হঠাৎ বৃষ্টি আর ভ্যাপসা গরম মিলিয়ে অনেকেই হয়ে পড়ছেন অসুস্থ। এরকম আবহাওয়ায় ঠাণ্ডা-জ্বর বা ভাইরাস সংক্রমিত জ্বর হতে পারে। এছাড়া এসময় ডেঙ্গুর প্রকোপও দেখা যাচ্ছে চারপাশে। তাই এ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ছেন সবাই। তবে এক্ষেত্রে কিছুটা সাবধানতা মেনে চললে জ্বর থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকা যায়। আগে জেনে নিই জ্বর সাধারণত কি কি কারনে হতে পারে-
ঘাম থেকে জ্বর
অনেকে গরমে খুব ঘামেন আর সেই ঘাম গায়েই শুকিয়ে যায় একসময়। তা থেকে অনেকের ঠাণ্ডা লাগে। এই ঠাণ্ডা থেকেই আবার সর্দি বা ভাইরাসজনিত জ্বর হয়ে থাকে, যা সাধারণত চার থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
আবহাওয়ার পরিবর্তন
এখন যাদের জ্বর হচ্ছে তাঁদের মূলত আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারনেই জ্বর হচ্ছে। একটানা বৃষ্টি বা স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ, অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডা এবং এক ঘরে অনেক লোক গাদাগাদি করে বসবাস করলেও জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কম রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন লোকদের হঠাৎ জ্বরের ঝুঁকি বেশি।
জ্বর হয়েছে কিভাবে বুঝবেন
আপনার জ্বর হয়েছে কিনা তা সহজেই আপনি অনুভব করতে পারবেন জ্বরের কিছু স্বাভাবিক লক্ষণ দ্বারা। এসময় প্রচন্ড মাথা ব্যথা বা মাথা ভারি বোধ হয়, শরীরে ব্যথা করে, হালকা জ্বর (১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি নয়) অনুভূত হয়, গলা ব্যথা করে । এছাড়াও অনেকের নাক দিয়ে অনবরত পানি পড়তে থাকে, চোখ লাল হয়ে যায় , এসব উপসর্গ পরিলক্ষিত হলে বুঝতে হবে জ্বর হয়েছে আপনার।
জ্বর হলে কি করবেন
অধিকাংশ সময়েই এ ধরণের ভাইরাস জ্বর বা গরমে জ্বর আপনা আপনি কয়েকদিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়। তাই এই জ্বর নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। জ্বর কমানোর জন্য তাই প্রথমে দেহের তাপমাত্রা কমানোর ওষুধ প্যারাসিটামল বা এইস অথবা এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ কয়েকদিন খেলেই এ রোগ সেরে যায়।তবে অনেক সময় ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের লক্ষণ থাকলে চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী উপযুক্ত এন্টিবায়োটিক সঠিক মাত্রায় পাঁচ থেকে সাত দিন খেতে হবে।
যদি আপনার শিশুর জ্বর হয়
বড়দের হয়তো জ্বর কমানোর জন্য সাধারণ প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেলেই স্বস্তি মেলে। কিন্তু শিশুদের বেলায় জ্বর হলে একটু বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। জ্বর, সর্দি-কাশির ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল সেবন করানো যেতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে ৫/৭ দিনের মধ্যে শিশুর কাশি বা জ্বর না কমলে এবং জ্বর চলাকালীন সময়ে যদি আপনার শিশুর বেশি বমি হয় বা পাতলা পায়খানা হয়, অনবরত কাঁদতে থাকে, শরীরে গুটি বা দানা দেখা দেয়, খিঁচুনি হয় তাহলে দেরি না করে অবশ্যই কোন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া ভালো।
জ্বর হলে স্পঞ্জিং
জ্বর হলে প্রাথমিকভাবে স্পঞ্জিং করা উচিত। অনেক ক্ষেত্রেই পুরো শরীর ভেজা নরম কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে একটানা কয়েকবার আলতো করে মুছে দিলে শরীরের তাপমাত্রা কমে যায় এবং খুব ভালো বোধ করে আক্রান্ত রোগী।এ কাজে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করতে হবে। খুব ঠাণ্ডা পানি আবার ব্যবহার করা ঠিক হবে না। আর শিশুদের ক্ষেত্রে পানিতে শিশুটিকে বসিয়ে স্পঞ্জ করাই সুবিধাজনক, তাই বড় কোন গামলা ভর্তি করে পানি নেয়া উচি। স্পঞ্জিং আলো-বাতাসযুক্ত স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ভালো কাজ দেয়।
বিশ্রাম ও খাবার
জ্বরের সময় যতটা সম্ভব বিশ্রামে থাকতে পারলে ভালো। স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে এছাড়াও লেবুর রস মুখে রুচি আনতে সাহায্য করে তাই লেবু বা লেবুর শরবত খাওয়া যেতে পারে। ফলের মধ্যে আনারস, পেয়ারা বা আমলকি জাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে। ঠাণ্ডা জাতীয় খাবার যেমন- আইসক্রিম, ফ্রিজের পানি, কোল্ড ড্রিঙ্কস একেবারেই পরিহার করতে হবে।
জ্বরের সময় সচেতনতা
জ্বরে আক্রান্ত হলে কিছু ব্যাপারে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। জ্বর হলে, অন্যদের সঙ্গে বিশেষ করে শিশুদের সঙ্গে মেলামেশায় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। হাঁচি দেয়ার সময় বা নাকের পানি মুছতে হলে রুমাল বা টিসু পেপার ব্যবহার করতে হবে এবং তা যেনো অন্য কেউ ব্যবহার না করে। যেখানে সেখানে কফ, থুথু বা নাকের শ্লেষ্মা একদম ফেলা যাবে না, এতে অন্যরাও আক্রান্ত হতে পারে। স্বাস্থ্যকর, খোলামেলা, শুষ্ক পরিবেশে যেখানে আলোবাতাস বেশি আসে এমন কক্ষে থাকতে হবে জ্বরের সময়।